ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়! -সুমি খান

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের তিরিশ লাখ শহীদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ কি অাজ অসাম্প্রদায়িক অাদর্শে একাত্ম হতে পারছে? বাহাত্তরের মহান সংবিধানের চার মূলনীতি যেখানে ভূলুন্ঠিত, সেখানে বঙ্গবন্ধুর অাদর্শ, তিরিশ লাখ শহীদের স্বপ্ন সমুন্নত থাকবে এই অাশা করা শুধুই দুরাশা।

দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ১৯৭১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ২২% থেকে ৮% এ নামলো কেন?গতকাল ও রাউজানের গহিরায় নিলু বড়ুয়ার বাড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। এই সত্য অস্বীকার করে দেশপ্রেম হয় না কখনো।

প্রিয়া সাহার ভিটে মাটি জামাত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর অনুসারীরা পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে ছাই করে দিয়েছে।তার কোন বিচার হয় নি।ওনার যন্ত্রণা কে বুঝবে? না বুঝুক,তাই বলে ফেসবুক জুড়ে এতো নোংরামি কেন?

প্রিয়া সাহা ভিটে ছাড়া, দেশছাড়া সংখ্যালঘুদের জন্যে ট্রাম্পের কাছে সহায়তা চেয়েছেন বলে তাঁকে ‘পতিতা’ বানিয়ে দিতে হবে? কেন? তাঁর পরিবার,তাঁর কন্যাদের নিয়ে যাচ্ছেতাই নোংরা কথা কেন লিখতে হবে? তিনি নারী এবং সংখ্যালঘু এটা কি অপরাধ?

প্রিয়া সাহা কোন মুসলমানকে দায়ী করেন নি। তিনি অসত্য কথা বলেন নি। মৌলবাদীরা হিন্দুদের জমি দখল করে তাদের ভিটেছাড়া করছে এবং তারা রাজনৈতিক অাশ্রয় পাচ্ছে বলেছেন। এতে মুসলমানদের এতো অাঁতে ঘা লাগছে কেন?তারা তো মৌলবাদী নয়। মৌলবাদী ধর্মান্ধ জঙ্গিদের অামি মুসলমান বা হিন্দু কোন ধর্মের ই মনে করি না। তারা সন্ত্রাসী। তারা বর্বর,তারা নিপীড়নকারী অবৈধ দখলদার।

মানুষ ভেতরে ভেতরে কী পরিমাণ স্বার্থান্ধ হয়েছে,ফেসবুকের কমেন্ট গুলো দেখলেই বোঝা যায়।ক্ষমতাসীন দল খুশি হবার কথা – তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা হয় নি ট্রাম্পকে। তারা বলতে পারতেন, প্রিয়া সাহার ভিটে মাটি উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হবে। কিন্তু না।তা তারা বলেন নি।

দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের মতো বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলে ও অাজ সাম্প্রদায়িক শক্তি তৎপর। অার তাই সেই দলের নেতা-কর্মীরা নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে গেছেন। ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’ ধরণের স্বার্থপরতা প্রত্যক্ষ করছি।

চরম সাম্প্রদায়িক বক্তব্য উঠে অাসছে অনেকের বক্তব্যে। ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হচ্ছে, তবু ফেসবুকের বন্ধুতালিকা ছাঁটাই করা শুরু করলাম। অামি কখনো ‘কোয়ান্টিটি’ দেখে ফেসবুকে বন্ধু তালিকা রাখি নি। অামার লড়াইয়ে যারা একাত্ম নন,তারা নিজেরাই সরে যেকে পারেন।নাহয় অামি তাদের পর্যায়ক্রমে অানফ্রেন্ড করবো।

পরিশেষে বলি,প্রিয়া সাহার সামাজিক অবস্থানের কারণে তিনি ট্রাম্পের মুখোমুখি হতে পেরেছেন। কয়েক মিনিটে যা বলেছেন, তা অবশ্যই তাঁর নিজস্ব বক্তব্য। অামি তাঁর বক্তব্যের ভিডিও দেখে অামার যা মনে হয়েছে, তা লিখেছি। অামি মনে করি, বিশ্বায়নের এ যুগে প্রত্যেকের ই নিজের বক্তব্য প্রকাশের অধিকার রয়েছে।

কেউ কেউ প্রিয়া সাহাকে দেশছাড়া করার কথা ও বলছে দেখছি। এ কেমন অন্যায়? প্রিয়া সাহার কথা বলার অতিকার অাছে।নিজের দেশে মাথা উঁচু করে থাকবার অধিকার ও অাছে। তাঁর বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করলে তাকে দেশছাড়া করতে হবে- এ কখনো হতে পারে না।

বরং প্রিয়া সাহা সহ অন্য যারা ভিটে ছাড়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের ভিটে মাটি ফিরিয়ে দেবার উদ্যোগ নিতে হবে সরকারের। একই সাথে কোন ধর্ম বা বর্ণের কোন মানুষ যেন এদেশে অার কখনো ভিটেছাড়া না হয়-মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এ সরকারকে সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।অার সেই উদ্যোগের সাথে থাকতে হবে এদেশের প্রতিটি সৎ ও সাহসী মানুষকে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on whatsapp
Share on email

Facebook Page

Subscribe Please